বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন
শাহজাহান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ : ‘আমার পোয়ার কিতা অইছে। আমরা বাড়িত অত মানুষ খেনে। আমার বউয়ে কান্দে খেনে।’ এভাবে বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন সৌদিআরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আলী আজগরের (৩৭) মা চন্দ্রবান বিবি। সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভার ঘাগটিয়া গ্রামে মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে নিহত আলী আজগরের বাড়িকে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। আলী আজগরের স্ত্রীর বড় ভাই মাওলানা ফয়সল আহমদ জানান, তার ছোট বোনের জামাতা আলী আজগর সৌদিআরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার খবর সোমবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনায় অপর নিহত পাশের বাড়ির আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছেন। এ খবর শোনার পর পর আজগরের মা চন্দ্রবান বিবি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আবোল তাবোল বকছেন। তিনি জানান, আজগরের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে ফারহান মিয়া ও ছোট ছেলের বয়স ১৪ দিন। আজগর এক বছর আগে দেশে এসে প্রায় চার মাস আগে সৌদিতে গেছেন। আজগর ৭ ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থ।
সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একই গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে একই দৃশ্য।মামুনের মামা আব্দুর রহিম জানান, সোমবার সন্ধ্যায় সৌদি থেকে মামুনের ছোট ভাই আব্দুল মুকিত সড়ক দুর্ঘটনায় মামুন ও আজগর মারা যাওয়ার খবর দেন। মামুনের অপর ছোট ভাই আব্দুল হাফিজ জানান, মামুনের ৩ ছেলে বড় ছেলে ফুজাইল আহমদ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, দ্বিতীয় ছেলে জিসান আহমদের বয়স ৫ বছর এবং ছোট ছেলে জকুয়ান আহমদের বয়স ৫ মাস। মামুনরা ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে মামুন সবার বড়। হাফিজ জানান, বড় ভাই মামুন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় তার মনে হচ্ছে মাথার উপর থেকে একটি বটগাছের ছায়া হারিয়ে ফেলেছেন।
মামুনের মা রহিমা বেগম ও স্ত্রী নাছিমা বেগম তার মৃত্যু সংবাদ শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। গ্রামের ইরশাদ মিয়া জানান, সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মামুন ও আজগর নিহত হওয়ার খবর গ্রামের পৌছার পর থেকে গ্রামটি একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। গ্রামের কারো মুখেই হাসি নেই। সব হাসি যেন খবরটি শোনার পর চলে গেছে। নিহত আলী আজগরের স্ত্রীর বড় ভাই মাওলানা ফয়সল আহমদ জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার ছোট বোনের জামাতার লাশ দেশে এনে দাফন করা ইচ্ছা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রবিবার রাতে জিজান থেকে দাম্মামে যাওয়ার পথে ওয়াদি আল দাওয়াস এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আলী আজগর নিহত হন। দীর্ঘদিন ধরে তারা দুজনেই সৌদিআরবের দাম্মামের জুবাইলে বসবাস করে আসছিলেন।